থাইল্যান্ড ভ্রমণ নিয়ে কিছুটা অভিজ্ঞতা (পাতায়া এবং ব্যাংকক)
থাইল্যান্ড ভ্রমণ

প্রথমবার থাইল্যান্ড ভ্রমণ কাহিনী

( এটা আমার প্রথমবার থাইল্যান্ড ভ্রমণ ছিল তাই অনেক কিছু মিছ হতেই পারে।)

প্রথম বার এজেন্সীর মাধ্যমে জমা দিয়ে VL খেয়েছিলাম তাই এইবার চিন্তা করলাম নিজেরটা নিজেই জমা দিব।তবে এবার সাথে আর দুই বন্ধু যেতে চাইলো তাই একটা না তিনটা পাসপোর্ট ই আমাকে রেডি করতে হবে।এখানে শুধুমাত্র আমার পাসপোর্ট VL আর বাকি দুইটা প্রথম বার থাই ভিসার জন্য আবেদন করবে। সব্কিছু বিবেচনা করলে এজেন্সীর মাধ্যমেই জমা দেয়া ভালো।

ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র :
১।বৈধ পাসপোর্ট (মেয়াদ ৬মাসের অধিক থাকতে হবে)
২।পাসপোর্ট ফটোকপি (শুধুমাত্র ইনফরমেশন পেইজ দিলেই হবে)
৩।২কপি ল্যাবপ্রিন্ট ছবি ( রিসেন্ট ছবি ৩৫x৪৫ এম এম হতে হবে)
৪।ব্যাংক সলভেন্সি এবং স্টেটম্যান্ট (স্টেটম্যান্ট মিনিমাম ৬ মাসের হতে হবে এবং এক লাখ টাকার উপর ব্যালেন্স থাকা ভাল)
৫।হোটেল বুকিং এবং এয়ারটিকেট বুকিং
৬।ট্রুর আইটেনারি এবং কভার লেটার
৭।অফিসের NOC এবং ভিজিটিং কার্ড
৮।থাইল্যান্ডের ভিসা এপ্লিকেশন ফর্ম
৯।৩৮৪০ টাকা নিজে জমা দিলে (এজেন্ট দিয়ে জমা দিলে ৪৫০০/৫০০০ টাকা)
১০।পাসপোর্ট যদি ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড এন্ডোস করা থাকে তাহলে কার্ড সহ এন্ডোস পেইজ ফটোকপি দিয়ে দিবেন।( এটা চায় না তারপরও দিয়ে দিলে ভাল)

এবার আসি আমার পাসপোর্ট জমা দেয়ার কাহিনী নিয়ে

আমি VFS এ আমার পাসপোর্ট জমা দেই ৬/১/২০১৯ তারিখে সাথে ছিল বন্ধু রাকিব। সব পেপার আগের রাতেই চেক করে নিলাম ঠিক আছে কিনা। আমরা ঠিক ভোর ৫:০০টায় বাসা থেকে বের হয়ে Uber নিয়ে vfs যাই ঠিক তখন দেখি ৫:৪৫ এখনো কেউ নাই। তাই আফসোস করতে শুরু করলাম কি ভুল ই না করলাম এত সকালে এসে। কারন আমার ধারনা ছিল ডিসেম্বরের মত অনেক ভির হবে।তারপর গার্ডের সাথে কথা বলে চা খেতে গেলাম। চা খেয়ে এসে দেখি ৪/৫ জন চলে এসেছে। যাই হোক ১নাম্বার সিরিয়াল টা কিন্ত আমারই ছিল।গল্প করতে করতে সময় চলে গেল টের ই পেলাম না।
এখানে পার্সোনাল আর এজেন্ট এর জন্য আলাদা লাইন।আর অথরাইজেশন লেটার নিয়ে একব্যক্তি অন্যের টা জমা দিতে পারবে।আমরা তাই করছি ২জনে ৩টা পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলাম।।

ঠিক সকাল ৯টায় অফিসের ভিতরে ঢোকলাম তারপর আমাকে একটু বসতে বললো ৯:১০ কাউন্টার থেকে আমার ডাক আসলো দুইটা পাসপোর্ট জমা দিয়ে বের হয়ে দেখি ৯:২৭ বাজে মাত্র।এখানে যারা পাসপোর্ট জমা রাখে তাদের ব্যবহার খুবই ভাল লেগেছে। তারা খুব যত্ন সহকারে আমার আবেদনটি গ্রহন করেছেন।

আবেদন জমা দেয়ার ঠিক ২ দিন পর আমার বন্ধুদ্বয়ের কাছে বিকাল ৫ টার দিকে ফোন আসে একজন রিসিভ করতে পারেনি।পরে ফোন বেক করেছিল কিন্ত তাতে কোন কাজ হয়নি।আর দ্বিতীয় জনকে সর্বমোট তিন বার ফোন করে কথা বলে আর তাকে অনেক গুলি প্রশ্ন করে। কিন্ত সে কিছু ইনফরমেশন গোপন করেছিল তা ধরা পরে যায়।তারপর তার উত্তর ছিল আমার ইচ্ছা হইছে থাইল্যান্ড ভ্রমণ -এ যাব তাই এপ্লাই করেছিলাম এখন ভিসা দিলে দেন না দিলে না দেন।ভিসা দিলে যাব আর না দিলে গেলাম না থাইল্যান্ড।ফলাফল দুইজনের একই VL দেয়া হয়েছে।

আমার কাছে ফোন আসে পাসপোর্ট জমা দেয়ার ৩দিন পর দুপুর ২:৩০ এ, আমার কাছে ফোনে যে প্রশ্ন গুলি করেছিল
১।আপনি কি কাজী নিয়াজ মোর্শেদ?
২। থাইল্যান্ড ভ্রমণ -এর জন্য আবেদন করেছেন এবং কেন যাবেন?
৩।আপনার কি আর কোন ব্যাংক একাউন্ট আছে?
৪।এটাকি সেলারি একাউন্ট?
৫। সেলারি কি ব্যাংকে পান নাকি ক্যাশ।
৬।এটা কোন প্রশ্ন ছিলনা ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন লাগলে আবার ফোন করব।

আমার ফোন কেটেই অফিসে ফোন করলো শুধুমাত্র একটি প্রশ্ন করেছিল।
১।আমি থাই এম্বেসী থেকে বলছি এখানে কি কাজী নিয়াজ মোর্শেদ আছেন?
হ্যাঁ সুচক উত্তর পেয়ে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন লাগলে পরে আবার ফোন করব।

ঠিক ১৪ তারিখ দুপুর ২:৪৩ মিনিটে এম্বেসী থেকে আবার ফোন করে বলে আপনার তো সেলারি ক্যাশে হয় তাই আপনাকে একটা সেলারি সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।এটা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আপনার পাসপোর্ট ফেরত দিতে পারছি না।তাই বাধ্য হয়ে ১৫ তারিখ সকাল বেলা VFS গিয়ে সেলারি সার্টিফিকেট দিয়ে আসলাম।

আমার পাসপোর্ট জমা দেয়ার ১৫ দিন ( ১০ কর্ম দিবস) পর ভিসা সহ জানুয়ারী ২১,২০১৯ তারিখ VFS থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসলাম।

কিভাবে থাইল্যান্ড ভ্রমণ: বাংলাদেশ থেকে কয়েকটি এয়ার লাইন্স সরাসরি থাইল্যান্ডের ব্যাংকক এয়ারপোর্টে যায়।ভাড়া ট্রাভেল ডেট এবং বিমান অনুযায়ী ১৫ থেকে ২৪ হাজার টাকার মত রির্টান আসে। সব চেয়ে ভাল হয় রাত ২টার থাই এয়ারের ফ্লাইটটি। কারন এটি খুব সকালেই ব্যাংককের সুভর্নভুমি এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিবে সেখান থেকে পাতায়া বাসে করে সকাল ১০ টার মধ্যেই পাতায়া চলে যাওয়া যায়। এছাড়া অন্য এয়ারে গেলে সন্ধ্যার মধ্যে পাতায়া যাওয়া যায়।

সুভর্নভুমি এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন শেষ করে সরাসরি এয়ারপোর্টের ৮ নং গেটে পাতায়ার বাস কাউন্টারে গিয়ে প্রথমে একটি টিকেট কেটে নিবেন ভাড়া নিবে ১২০ বাথ। ভাগ্যভাল থাকলে রানিং বাসের টিকেট পেতে পারেন, তা না হলে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী বাসের জন্য।বাসের টিকেট কেটে এবার এয়ারপোর্টে ২য় তলায় ফ্যামিলি মার্ট বা 7 Eleven এ গিয়ে AIS এর একটি সিম নিতে পারেন ৮৮ বাথ দিয়ে ৭ দিনের জন্য আনলিমিটেড ডাটা,অন্য সিম নিলে ২০০ বাথ খরচ পরবে।এছড়াও এখানেই ৩৫/৪৫ বাথ দিয়ে চিকেন ফ্রাইড রাইস,ফিস ফ্রাইড রাইস, এগ ফ্রাইড রাইস কিনে সকালের নাস্তা /লাঞ্চ করে নিতে পারেন।

বাসে পাতায়া যেতে ২ঘন্টা বা তার থেকে একটু বেশি সময় লাগে নামতে হবে ২য় / ৩য় বাস কাউন্টারের। বাসটি ৩টা কাউন্টার ধরে।এর পর একটি টুকটুক নিয়ে হোটেলে চলে আসতে পারেন।অবস্বই বিচ রোড বা ওয়াকিং স্ট্রিট এর আশে পাশে হোটেল নিতে হবে।
আমাদের হোটেল (La Canteena) ছিল চুনবুড়ি এরিয়াতে এটি বিচ এরিয়া বা ওয়াকিং স্ট্রিট থেকে ৭ মিনিটের হাটা ডিস্টেন্স ভাড়া ছিল তিন রাতের জন্য ১৩৫০ বাথ আমার কাছে রুমটিকে একটা ছোটখাটো ফুটবলের মাঠ মনে হয়েছিল, রুমে ডাবল বেড,টিভি,ফ্রীজ,২টা ফ্যান,এসি,সোফা,ওভেন,ডাইনিং, ড্রেসিন টেবিল,আলমারি এবং বাথরুমে গিজার্ড এর ব্যবস্থা ছিল।আসলে এটাকে হোটেল বললেই ভুল হবে এটা ছিল সার্ভিস এপার্টম্যান্ট টাইপের। মজার ব্যাপার হল প্রথম দিন
আমাদের চাবি বুঝিয়ে দেয়ার পর যে তিন দিন ছিলাম কর্তৃপক্ষের কাউকে পাই নাই।এমন কি আসার সময় চাবিটা বুঝিয়ে দিয়ে আসতে পারি নাই।

পাতায়া তে ঘুরে দেখার স্থান:Jomtien Beach, Underwater world,Speedway, Outlet Mall, Floating Market, Walking Street, Mimosa pattaya, CN amazone water park,Na Baan pier,Central Festival pattay beach, Pattaya Park Tower, Pattaya Viewpoint, Ripley’s Believe It Or Not,
Pattaya Floating Market,”Buddha Mountain (Khao Chi Chan)” Tiger Park,Sanctuary of Truth এবং Koh Larn Island.

ট্রান্সপোর্ট : পাতায়াতে টেক্সি খুব কমই চলে তবে টুকটুক, বাইক শেয়ারিং, ব্যবহার করতে পারেন। তবে সবচেয়ে সহজ হলো স্কুটি বা বাইক রেন্ট নেয়া সারাদিন এর জন্য ২০০ থেকে ৪০০ বাথ নেয় বাইক এর ধরন অনুযায়ী আর ১০০ বাথ দিয়ে তেল কিনলে সারাদিন চলে যায়।বাইক ভাড়া নিতে ড্রাইভিং ল্যাইসেন্স বা ন্যাশনাল আইডি জমা দিলেই হয়।কেউ কেউ ২০০০ বাথ ডিপজিট রাখে।তবে আমার কাছে বাইক রেন্ট সবচেয়ে সহজ ও ভাল মনে হয়েছে।

দিনের বেলা পাতায়ার Walking Street ঘুমালেও রাতের বেলা ঠিকই জমজমাট হয়ে উঠে।পাতায়ার সবচেয়ে আর্কশিনয় স্থান এটি।

Koh Larn Island : পাতায়ার walking Street এর ঠিক শেষ মাথার থেকে Koh Larn Island যাওয়ায় ফেরি ছাড়ে ভাড়া পরে ৩০ বাত আর সময় লাগে ৪০/৫০ মিনিট। প্রপ্রতি ৩০ মিনিট পর পর ফেরি পাওয়া যায়।Koh Larn Island এ মুলত কয়েকটি বিচ রয়েছে তাই পুরা দ্বিপটি ভাল ভাবে দেখার জন্য সকাল সকাল যাওয়া ভাল। আর দ্বিপটিতে গিয়ে ২০০/৩০০ বাত দিয়ে ⛽ তেল সহ স্কুটি ভাড়া নিয়ে সবগুলি বিচ ঘুরে দেখতে পারেন।

থাইল্যান্ড ভ্রমণ -এ কোথায় খাবেন: পাতায়াতে বাংলাদেশী খাবারের জন্য ওয়াকিং স্ট্রিট বা বিচ রোডের আশেপাশে অনেক রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায়।এইগুলিতে থাই,ইন্ডিয়ান, বাংলা খাবার পাওয়া যায়। প্রতিবেলা খাবারের জন্য ২০০/৩০০ বাত এর মত খরচ লাগবে।তাছাড়া 7 Eleven এ ৩৫ থেকে ৫০ বাতের মধ্যে চিকেন ফ্রাইড রাইস পাওয়া যায় তা ওভেন এ গরম করে সেখানেই খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।

থাইল্যান্ড ভ্রমণ -এ ব্যাংকক : পাতায়া বাস স্টান থেকে ব্যাংককের Ekamoyi বাস স্টানে সরাসরি বাস যায় ভাড়া নিবে ১০৮ বাত ব্যাংকক যেতে সময় লাগবে ২ ঘন্টার মত। সেখানেই ২মিনিটের দূরত্বেই পাবেন MRT স্টেশন। MRT তে করে Ekamoyi স্টেশন থেকে চলে যেতে হবে Nana স্টেশন এই এরিয়া টার নাম Shukumvit এই এরিয়া তেই বাংলাদেশী খাবার পাওয়া যায় তাই সাধারণত বাংলাদেশের লোকজন এই এলাকাতেই থাকে SOI 1,3,5,7,9,11 অথবা SOI 2,4,6,8,10 এর ভিতরেই থাকা ভাল হবে.।SoI 1,3 এবং SOI 2,4 রাস্থার নাব্বার।

ব্যাংককে ঘুরে দেখার স্থান: ব্যাংককে সাধারণত যে সব স্থান ঘুরে দেখার মত The Grand Palace,Wat Mahathat,Wat Intharawihan,Democracy Monument, Safari World,Dream World,Wat Arun in Bangkok,Dusit Palace,Siam Ocean World,Dusit Palace,Madame Tussauds,Wat Hua Lamphong,Madame Tussauds,Beckoning Chinatown,Khao San Road,
Chao Phraya River, Lumphini Park,Wat Mangkon, Ride at Asiatique Sky.

শপিংমল : রিজেনেবল প্রাইজে শপিং করার জন্য Indira Square হচ্ছে সবচেয়ে ভাল।তাছাড়া MBK, Pratuname Market, The platinum shopping Mall, থাইল্যান্ড ভ্রমণ -এ ট্রুরিস্টদের জন্য GST Refund এর ব্যবস্থা আছে,তবে GST Claim করা যায় যে সকল দোকানে,কেনার সময় পাসপোর্ট দেখিয়ে জিসটি ক্লেইম করে নিতে হয়।

এয়ারপোর্ট যাওয়া: থাইল্যান্ড ভ্রমণ -এ ব্যাংককে যেহেতু ২টা এয়ারপোর্ট থেকেই বাংলাদেশের ফ্লাইট আসে তাই কনফার্ম হয়ে নিতে হবে কোন এয়ারপোর্ট থেকে আপনার ফ্লাইট, Don Meung Airport সিটির ভিতরে হওয়ায় জ্যামের কারনে অনেক সময় টাইম একটু বেশি লাগে।মিটার টেক্সিতে গেলে ভাড়া ২০০-২৩০ বাত উঠে কিন্ত টেক্সি মিটারে যেতে চায় না তা কন্টাকে ৩৫০-৪০০ বাত নেয়।Grap এ ৩৫০-৪০০ বাত এর মতই আসে।২য় এয়ারপোর্ট হচ্ছে সুভর্নভূমি এয়ারপোর্ট এখানেও shukumvit এরিয়া থেকে টেক্সিতে গেলে ৩৫০_৪০০ বাত নেয় কিন্ত কন্টাক করার সময় বলে নিতে হবে হাইওয়ে টেক্স সহ (হাইওয়ে খরচ টেক্সি ড্রাইভার দিবে)।এছাড়াও ইচ্ছে করলেই MRT তে যেতে পারেন।

 

বিদ্র: আপনি যেখানেই যান না কেন আপনি আপনার পরিবার ,সমাজ এবং দেশকে প্রতিনিধিত্ত করেন।তাই এমন কোন কাজ করবেন না যাতে আপনার,আপনার পরিবারের,সমাজের এবং দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।

থাইল্যান্ড ভ্রমণ নিয়ে কিছুটা অভিজ্ঞতা (পাতায়া এবং ব্যাংকক) প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

মূল লেখক: কাজী নিয়াজ মোর্শেদ

Regarding Visa Requirements & Application Process :

Traveltek BD

1301/1 East Monipur,Begum Rokeya Sarani,Mirpur-10

Email:visa@traveltekbd.com

Website: www.traveltekbd.com

Contact with Our Visa Consultant:

Mobile & WhatsApp Number

(+8801610-881122)

Traveltek BD only provide Visa logistics support with your documents. Visa grant is the distinct decision of embassy or consulate of the respective countries.

 

 

Comments

Leave a Reply